ঢাবির বুকে সিরাহ থেকে কর্জে-হাসনা
হাঁটাহাঁটি পা পা করে ঢাবির বুকে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দাওয়া সার্কেল’ তাঁর স্বপ্নকে বেগবান করে যাচ্ছে। বপিত বীজ অঙ্কুরোদগমন হয়ে মহীরূহে পরিণত হতে যাচ্ছে। শিখরীর শাখা প্রশাখা স্বপ্ন বাস্তবায়নে ছুটে চলছে। তারই ধারাবাহিকতায় আমরা এবার শুরু করতে যাচ্ছি ছাত্র বান্ধব ‘কর্জে হাসানা(সুদমুক্ত ঋণ)’ প্রজেক্ট। নবীর সিরাহ থেকে শিক্ষা নিয়ে একদিকে তরুণদের অর্থকষ্ট লাঘবের প্রচেষ্টা, অপরদিকে নববী আদর্শে সুদবিহীন একটি সুন্দর সমাজ প্রতিষ্ঠা করার সাধনা। হারাতে বসা সুন্নাহকে নতুন করে পুনরুজ্জীবিত করা আমাদের লক্ষ্য। আর এই লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একঝাঁক অগ্রজ ও অনুজ।
দু’বছর আগেই পৃথিবীব্যাপী যখন করোনা মহামারির আর্তনাদ ছিল সেই আর্তনাদের সময়ে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দাওয়া সার্কেলের জন্ম’। এরই মাঝে সফলভাবে দু’টি সিরাত প্রতিযোগিতা সম্পন্ন করেছি আলহামদুলিল্লাহ। আমরা কেবল তত্ত্বের বেড়াজালে থেমে থাকিনি। নবীর জীবনের প্রায়োগিক দিকগুলো এক এক করে আমাদের মাঝে প্রয়োগের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। নবীর সিরাত বলতে আমরা যখন বুঝতে পেরেছি জ্ঞান এবং প্রজ্ঞা। তখন আমরা সেই জ্ঞানের মশাল নিয়ে বেরিয়ে পড়ার সাহস করেছি। প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে সবার নখদর্পনে উপস্থিত হওয়ার ইরাদা করেছি। তখনই দাওয়া সার্কেলের উদর থেকে জন্ম হল ‘ইসলামিক লাইব্রেরি ‘। আমরা বিনা টকায় শিক্ষার্থীদের মাঝে বই ধার নিয়ে পড়ার আগ্রহ তৈরি করেছি। পছন্দের বই অনলাইনে সিলেক্ট করে অর্ডার করলেই কাঙ্ক্ষিত বই পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। আমাদের লাইব্রেরি প্রতিদিন সমৃদ্ধ করার চেষ্টা করছি। অজ্ঞতা এবং মূর্খতার বিরুদ্ধে আমাদের ‘ইকরা’ আন্দোলন সুণিপুণভাবে এগিয়ে চলছে। হাজারো পাঠক আমাদের থেকে বই ধার নিয়ে পড়ে সমৃদ্ধ হচ্ছে। অন্ধকার থেকে দীনের আলোয় আলোকিত করছে শত তরুণ-তরুণী। দোলনা থেকে কবর অবধি জ্ঞানের যে পাঠ আমরা সিরাহ থেকে পাই সে পাঠের পূর্ণতা দিতে আমাদের এই বই ধার আন্দোলন।
আমরা যখন নবীর সিরাহর আরেকটু গভীরে প্রবেশ করলাম তখন জানতে পারলাম জাহেলী যুগের সেই সুদ ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থার কথা। মহাজনী সুদ কীভাবে গরীবকে আরো পঙ্গু করে তোলে। আমরা নবীর সিরাহের নির্দেশে কুরআন খুললাম, দেখতে পেলাম, আল্লাহ বলেন, “তোমরা যা ভালোবাস তা হতে ব্যয় না করা পর্যন্ত তোমরা কখনো পুণ্যলাভ করবে না” – (সূরা আ-লি ইমরান ৯২) আবার অন্য আয়াতে বললেন “কে সে ব্যক্তি যে আল্লাহ তা’আলাকে উত্তম ঋণ প্রদান করবে? তিনি তার জন্য তা বহু গুণে বৃদ্ধি করবেন” – (সূরা আল –বাক্বারাহ ২৪৫)
এরপর চোখ খুলে আমরা আমাদের সমাজের দিকে তাকালাম। দেখতে পেলাম জাহেলী যুগের সেই সুদ ব্যবস্থা ভিন্ন নামে আমাদের মাঝে উপস্থিত। কখনো কখনো শিক্ষার্থী ভর্তি হতে এনজিওর কাছে লোন নিচ্ছে, কখনো পারিবারিক প্রয়োজনে সুদের বিনিময়ে লোন নিচ্ছে। তখন আমরা নিজেদের জিজ্ঞাসা করলাম আমরা কী ভালোবাসি? কিছুক্ষণ ভেবেচিন্তে বুঝলাম, আমরা অর্থ ভালোবাসি, তাহলে কেন আমরা তা আল্লাহর দীনের জন্য আল্লাহর বান্দার জন্য উন্মুক্ত করব না? কেন আমরা সেই শিক্ষার্থীর পাশে দাঁড়াব না যে টাকার অভাবে মাস শেষের দিকে চলতে পারে না, অসুস্থ হলে চিকিৎসা করাতে পারে না, পড়ার জন্য বই কিনতে পারে না। আরো নানাবিধ প্রয়োজন পূরণ করতে পারে না ঠিক সময়ে অর্থের অভাবে। সেই ঠিক সময়ের অভাবকে কিছুটা পূরণ করতে আমাদের এই ‘কর্জ-হাসানার’ ক্ষুদ্র প্রয়াস। এই শুরু যেন ঢাবি ক্যাম্পাসে আমৃত্যু বহাল থাকে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে পড়ে। ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে যেন এরকম স্টুডেন্ট বান্ধব উদ্যোগ গড়ে ওঠে। যখন হঠাৎ অর্থের প্রয়োজন হবে তখনই যেন হাত বাড়ালেই প্রয়োজন পূরণের উপকরণ পাওয়া যায়। মানুষ যেন মানুষের প্রয়োজন পূরণের মাধ্যম হয়। এই মাধ্যম যেন আমাদের কবুলিয়তের উসিলা হয়। আমাদের হৃদয়ে স্বর্গীয় সুকুন নামে।
“যারা আল্লাহর পথে তাদের সম্পদ ব্যয় করে, তাদের উপমা একটি বীজের মত, যা উৎপন্ন করল সাতটি শীষ, প্রতিটি শীষে রয়েছে একশ’ দানা। আর আল্লাহ যাকে চান তার জন্য বাড়িয়ে দেন। আর আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।”(সূরা বাকারা :২৬১)
তাই আপনাকে বলছি, যদি আপনি ঢাবির সাবেক বা বর্তমান স্টুডেন্ট হয়ে থাকেন, তাহলে আমাদের পরিবারে আপনাকে স্বাগতম। আপনার প্রয়োজনের মুহূর্তে আমরা আপনার সাথে একসাথে হাটব ইনশা- আল্লাহ।
আমাদের সাথে যুক্ত হউন একমাত্র আল্লাহর জন্য। এখানে অনুদান, সেচ্ছাসেবা, সুন্দর পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করুন।
ইমেইল: duislamiclibrary@gmail.com